নীর মহল ত্রিপুরার সেরা একটি দর্শনীয় স্থান।কারণ এর নির্মাণ শৈলী আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে।নামে নীরমহল যদিও আমার কাছে হাওয়া মহল মনে হয়েছে।মহলের প্রতিটি অংশে প্রতিটা কক্ষে প্রবল বেগে হাওয়া চলাচল করে।এমন বৈজ্ঞানিক নির্মাণ কলাকৌশল বিরল।মহলের প্রতিটি ছাদ থেকে সব গুলো ছাদে যাওয়া যায়।এখানে না গেলে আপনার ত্রিপুরা ভ্রমণ অসম্পুর্ন রয়ে যাবে।নীরমহল রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৫৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।আগরতলা শহর থেকে বিশ্রামগঞ্জ হয়ে যাত্রা পথে দেখা মিলবে ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটি, পাহাড়ি রাবার বাগান,সিপাহিজলা ফরেষ্ট। ত্রিপুরার ছোট একটি জনপদ মেলাঘরে নীরমহল অবস্থিত।মেলাঘর বাজারের পাশে বিশাল একটি জলাশয় আছে যার নাম রুদ্রসাগর।এই জলাশয়ের আয়তন ৫ একরের থেকেও বেশী।রুদ্রসাগর জলাশয়ের ঠিক মাঝখানে রূপকথার রাজপ্রাসাদের মতো দাঁড়িয়ে আছে নীরমহল। নৌকায় চড়েই আপনাকে পৌঁছতে হবে স্বপ্নের মতো সুন্দর এই নীরমহল।রাতে থাকার জন্য সাগরমহল নামে একটি সরকারি রেষ্ট হাউজ আছে । রুদ্র সাগরের পূর্ব তীরে, যার অবস্থান একেবারে নীরমহলের মুখোমুখি। নীরমহল প্রাসাদ ও রুদ্র সাগরের সৌন্দর্যের কোন তুলনা হয় না। বোটঘাট থেকে নীরমহলে ইঞ্জিনচালিত বোটে যেতে হবে এবং এই যাওয়া আসার পথে জেলেদের মাছ ধরা বিভিন্ন পাখপাখালির দেখা মিলবে। এই রুদ্র সাগরের নৌ ভ্রমণ আপনাকে বাড়তি আনন্দ দিবে।

#নীরমহলেরইতিহাস চতুর্দিকে ‘নীর’ অর্থাৎ পানির মধ্যে প্রাসাদটির অবস্থান বলেই এর নাম হয়েছে নীরমহল। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য এই নীরমহল তৈরি করেন। ইংল্যান্ডের মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোম্পানি ১৯৩০ সালে এর কাজ শুরু করে এবং ১৯৩৮ সালে ভবনটির উদ্বোধন করা হয়।এর আয়তন প্রায় পাচ দশমিক তিন বর্গ কিঃমিঃ। রুদ্রসাগরের ঠিক মাঝমাঝি অবস্থানে ত্রিপুরার রাজা গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন অবকাশ যাপনের জন্য এই জল মহল নির্মাণ করেন। ভবনটি একাধারে যেমন রাজার সৌন্দর্যপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়, তেমনি হিন্দু ও মোঘল সংস্কৃতির মিশ্রণে অসাধারণ একটি দর্শনীয় তৈরি করা হয়েছে।
#নীরমহলে যা দেখা যাবেঃ
প্রাসাদ দুটি অংশে বিভক্ত । মূল অংশ রয়েছে পশ্চিম পাশে এবং পূর্ব পাশে রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যারাক। মূল অংশকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে বাহির কক্ষ এবং অন্দরমহল। বাহিরের কক্ষগুলোর মধ্যে অভ্যর্থনা কক্ষ ও নাচঘর উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের পাঁচটি কক্ষ সেখানে রয়েছে। এছাড়া দাবা খেলার জন্যও একটি আলাদা কক্ষ দেখেছি। রাণী ও অন্যদের জন্য অন্দরমহলে রয়েছে বিশাল ছয়টি কক্ষ। এছাড়া রান্না ঘর, রাজার সভাঘর, আড্ডাঘর ইত্যাদি তো রয়েছেই। বর্তমানে মহলের ভিতরে একটি জাদুঘর বানানো হয়েছে।অন্দরমহলটি এমনভাবে সাজানো যাতে রাজপরিবার নৌকাভ্রমণ করে অন্দরমহলের সিঁড়িতে প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া প্রাসাদের ভেতরে মাঝখানের অংশে সূদৃশ্য বাগান রয়েছে।শুনেছি প্রতি বছর শীতের সময়ে নাকি লাইট এন্ড লেজার শো এর আয়োজন করা হয়।এছাড়া প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে রুদ্রসাগর লেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

#রুদ্রসাগর ঘাট থেকে নীরমহল যাওয়া-আসাঃ
ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়া জনপ্রতি ৩০ রুপি।মহলে অবস্থানের সময় ৪০ মিনিট।
হস্ত চালিত নৌকাতেও যাওয়া যায়।
#নীরমহলে প্রবেশ ফিঃ১০রুপি।
নীরমহলে প্রবেশ সময়ঃ সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা
#যেভাবে যাবেনঃ
আগরতলা থেকে নীরমহলে যেভাবে যাবেনঃ
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে রিজার্ভ কার বা বাসে মেলাঘর যাওয়া যায় বাস ভাড়া ৪০ রুপি জনপ্রতি। সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।আমরা আগরতলা থেকে ওয়াগনার কারে ১১০০ রুপি ভাড়ায় রিজার্ভ গিয়েছিলাম।গাড়ি পার্কিং চার্জ ২০ রুপি।
#বিঃদ্রঃ রুদ্রসাগর জলাশয়ের পানি বেশ সচ্ছ কোন ময়লা আবর্জনা নেই তাই এখানে বেড়াতে গিয়ে আমরা পরিবেশ নোংরা করবো না।নীরমহলে প্রবেশ সিড়ির পাশে সহ বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন রয়েছে সেগুলো সবার ব্যবহার করা উচিত।

লেখা ও ছবিঃ Ismail Hossain