কোথায় যেন দার্জিলিং এর কথা প্রথম জানতে পেরেছি মনে নেই। কিন্তু পাহাড়, আর মেঘ ছোঁয়ার গল্প পড়ে ঠিক করেছি  যদি কখনো ইন্ডিয়া যাই, তাহলে দার্জিলিংই সবার আগে যাবো। এটাই আমার প্রথম ইন্ডিয়া ট্যুর, এবং আমি দার্জিলিংই যাচ্ছি।

দার্জিলিং এর মানুষ এক সাথে অনেক গুলো ভাষায় কথা বলে। ওদের প্রধান ভাষা হচ্ছে নেপালি। দার্জিলিং পশ্চিম বাংলায় অবস্থিত। পশ্চিম বাংলার আন্ডারে ওদের প্রশাসন। বাংলাও জানে। হিন্দি তো জানেই। সারা বিশ্ব থেকে অনেক  ট্যুরিস্ট আসার কারণে ইংরেজিও জানে বা জানতে হয়।

দার্জিলিং অনেক শান্ত একটা শহর কল্পনা করেছি। কিন্তু গিয়ে দেখি অনেক মানুষ। সুন্দর জায়গা। পাহাড়, মেঘ, সবুজের সমাহরহ। পাহাড়ের মাঝে মাঝে ছোট খাটো লেক চোখে পড়ল। লেকের পানি গুলো অনেক স্বচ্ছ। আর ঐ পানিতে গাছের ছায়া অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। মেঘ গুলো কত নিচে। মেঘের ও উপরে একটি শহর। মাঝে মাঝে মেঘ ছৌঁয়া যায়।

ভিসা করে রেখেছি আরো অনেক আগে।  প্রায় চার মাস আগে। ইন্ডিয়াতে এক সাথে অনেক বড় ট্যুর দিব চিন্তা করে সময় বের করে উঠতে পারছিলাম না। তাই একদিন ঠিক করলাম ছোট ট্যুর হলেও দার্জিলিং থেকে ঘুরে আসব। এরপর ২৬ তারিখে হঠাৎ করেই ঢাকা  থেকে কলকাতার টিকেট কেটে ফেলি। আমাকে যে ভিসা দেওয়া হয়েছিল, তা হয় এয়ার অথবা হরিদাশপুর বর্ডার হয়ে যেতে হবে। দার্জিলিং আমাদের তেতুলিয়া থেকে কাছেই। কিন্তু হরিদাশপুর হয়ে যেতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই চিন্তা করলাম এয়ারেই চলে যাবো।  দার্জিলিং এর কাছা কাছি এয়ারপোর্ট হচ্ছে বাগডোগরা। আবার বাগডোগরাতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। তাই প্রথমে ঢাকা থেকে কলকাতার টিকেট কেটে নি। আর তা ২৮ তারিখ সকালে। ৮.৪০ এ ফ্লাইট। কলকাতা গিয়ে পরে বাগডোগরার টিকেট কাটব।

ঢাকা থেকে কলকাতা

সকালে কলকাতা আসার কথা ছিল। ৮.৪০ এ ফ্লাইট। সকালে জ্যাম থাকবেনা মনে করে আমি ৭টায় রুম থেকে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় এয়ারপোর্টে ঠিক মত পৌঁছাতে পারি নি। ফ্লাইট মিস করেছি। এর পরের ফ্লাইট সন্ধ্যায়। কলকাতা যাওয়ার জন্য বিমান বাংলাদেশের টিকেট কাটি। পরে ওদের অফিসে গিয়ে বলি আমি ফ্লাইট মিস করেছি। পরবর্তী ফ্লাইট কখন তা জিজ্ঞেস করার পর বলল সন্ধ্যায়। কিছু জরিমানা দিয়ে পরে সন্ধ্যার টিকেট কনফার্ম করি। সন্ধ্যার ফ্লাইটে কলকাতা আসি। সারাদিন এয়ারপোর্টে কাটিয়ে দিয়েছি।  Hannibal দেখে। শুধু দুপুরে এয়ারপোর্ট থেকে  বের হয়ে  দুপরের  খাবার খেয়ে নি।

কলকাতায় পৌঁছে বাগডোগরার টিকেট কেনার চেষ্টা করি। প্রায় এয়ারলাইন্স এর  টিকেটই শেষ। Jet Air এ টিকেট  রয়েছে। অন্য সব এয়ার থেকে বেশি ফেয়ার। পরে Jet Air থেকেই টিকেট কিনে নি।  এরপরের কাজ হচ্ছে হোটেল।

রাতে হোটেলেই খাবার খেয়ে নি। যে ভাত গুলো দিয়েছে, সেগুলো নুডুলস এর মত। লম্বা লম্বা ভাত। প্রথমে কনফিউসড ছিলাম। এগুলো ভাত নাকি নুডলস। পরে প্যাকেটের গায়ে দেখি, ছাওমিন ফ্রাইড রাইস। বুঝলাম, ভাতই খাচ্ছি।

কলকাতার ট্যাক্সি ড্রাইভার গুলো কক্সবাজারের রিক্সা বা CNG ড্রাইভারের মত। দালাল আরকি। নিজেদের পছন্দ মত হোটেলে নিয়ে যাবে। জিনিসটা খারাপ। কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে নামলেই থাকার জন্য অনেক গুলো হোটেল পাওয়া যাবে। ট্যাক্সি নেওয়ার দরকার  ছিল না। কিন্তু একবার যখন শুনছে আমার হোটেল দরকার, তখন আমাকে আর ছাড়ে নি। আমিও ফাঁদে পড়ি।

 কলকাতা থেকে দার্জিলিং

হোটেল থেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই বের হয়ে পড়ি। তখন লোকাল সাড়ে ৬টা মাত্র। সকালটা শুরু করি এক কাপ চা দিয়ে। চায়ের কাপটা অনেক ছোট। দুই তিন চুমুক চা মাত্র।

এরপর লুচি আর ভাজি-ডাল খেয়ে নি। কলকাতায় মানুষ তিন রকম ভাষায় কথা বলে। হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি। খাওয়া দাওয়া করে এয়ারপোর্ট চলে আসি। এখানে এসে বোর্ডিং পাস নেওয়া, চেক ইন ইত্যাদি করতে করতেই অনেক সময় চলে গেলো। ফ্লাইট ১০টা ২০ এর দিকে।

১১টা ২০ এর দিকে বাগডোগরা এসে পৌছাই। প্রথম প্রথম Bagdogra উচ্চারণ অনেক কষ্ট হতো। বিদগুটে মনে হত। এখন ইজি হয়ে গেছে। বাগডোগরা থেকে আসি শিলিগুড়ি। জংশন নামক জায়গায়। এখান থেকে দার্জিলিং এর গাড়ি রয়েছে। অনেকক্ষণ ঐখানে বসে থাকতে হয়েছে। দার্জিলিং এর অন্যান্য যাত্রীর জন্য। পানির কূপ অনেক বার দেখলেও প্রথম কূপ থেকে পানি উত্তলন করি শিলিগুড়িতে।

প্রায় ৩০ মিনিটের মত বসে থাকার পর দার্জিলিং এর দিকে রওনা দি। ঐ জীপ  গুলো পাহাড়ে চলার উপযোগী। যাত্রী মাত্র চার জন  ছিলাম আমরা। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং দিকে রওনা দেওয়ার সময় থেকেই পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছিল। যেন পাহাড় গুলো আমাদের ডাকছে। পাহাড় গুলোর উপরেই দার্জিলিং। অনেক উপরে। নিচ থেকে যে পাহাড়টি দেখি, ঐ পাহাড়টির ছুঁড়ায় উঠলে নতুন পাহাড়ের ছুঁড়া দেখা যায়। তারপর ঐটার উপর ও উঠি, তারপর আরেকটা ছুঁড়া। এভাবেই উপরের দিকে উঠতে থাকি।