একদিনেই ঘুরে আসা যাক কিশোরগঞ্জের কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা।

কি কি ঘুরবেনঃ
#ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
#ঈসা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ
#চন্দ্রাবতীর মন্দির+বাড়ি
#গুরুদয়াল কলেজ
#পাগলা মসজিদ
#গাংগাটিয়া জমিদারবাড়ি

রুট প্লান হবে এমনঃ ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন-শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান-ঈসা খাঁর জঙ্গলবাড়ি-বটতলা-চন্দ্রাবতীর মন্দির+বাড়ি-বটতলা-গুরুদয়াল কলেজ-পাগলা মসজিদ-হোসেনপুর-গাংগাটিয়া জমিদারবাড়ি-হোসেনপুর-জেলখানা রোড চৌরাস্তা-ঢাকা।

শোলাকিয়া ঈদগাহঃ
ইসলামের ঐশী বাণী প্রচার করতে ইয়েমেন থেকে আগত সুফি সৈয়দ আহমেদ এর পূর্বপুরুষ।এই ময়দানে তিনি ১৮২৮ সালে ঈদের জামাতের আয়োজন করনে।অনেকের মতে জামাতে সেদিন “সোয়া লাখ” মুসল্লি ছিলেন তাই এর নাম পরবর্তীতে হয় “শোলাকিয়া”। আবার কেউ বলেন,মোগল আমলে এই অঞ্চলের খাজনা “সোয়া লাখ” টাকা ছিল।ভাষার পরিবর্তনে তাই হয়েছে “শোলাকিয়া” ঈদগাহ ময়দান।(রেলস্টেশন থেকে অটোতে ভাড়া ৫ টাকা)

ঈসা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গঃ
এটা ঈসা খাঁ এর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল।যদিও এই দূর্গ ঈসাখাঁ বানান নি।বাংলায় জমিদারগণ তার জনগণের উপর অত্যাচার করছিল এমন গোয়ান্দা তথ্য পেয়ে তিনি ১৪০০ ঘোড়াওয়াস,২১টি নৌবিহার নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য পৌছান।১৫৮৫ সালে তিনি রাজা লক্ষ্মণ ও রামকে পরাজিত করে এই দূর্গ দখল করেন।(বর্তমানে এই দূর্গের অবস্থা নাজুক,কিছু নেই বললেই চলে)দূর্গের পাশেই আছে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।ধারণা করা হয়,ঈসাখাঁই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।হ্যা,মসজিদের সামনে বড় একটু পুকুর আছে,গভীরতা আমরা কম পেয়েছি(গোসলও করেছি)।চাইলে সেখানে গোসলটা সেরে নিতে পারেন।(শোলাকিয়া থেকে অটোতে ভাড়া ২০ টাকা)

চন্দ্রাবতীর মন্দির+বাড়িঃ
বাংলা সাহিত্য ইতিহাসে চন্দ্রাবতী ছিলেন প্রথম বাঙ্গালী মহিলা কবি।মূলত ষোড়শ শতকে চন্দ্রাবতীর বাবা তার জন্য এই শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেন।এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা ঘটনা।জানা যায়,কিশোরী বয়ছে স্থানীয় এক যুবকের সাথে মনের আদান-প্রদান হয় চন্দ্রাবতীর।পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করতে না পেরে চন্দ্রাবতী চিরকুমারী থাকার সিদ্ধান্ত নেন।তার আব্দারেই তার বাবা তার জন্য মন্দিরটি নির্মাণ করে দেন।মন্দিরের পাশেই আছে চন্দ্রাবতীর বাড়ি।এই বাড়ি সংরক্ষণের অভাবে ভগ্নপ্রায়। বাড়ির আশেপাশে কিছু পরিবার বাড়ি তৈরি করে থাকেন তাই চন্দ্রাবতীর বাড়িতে প্রবেশে তাদের অনুমতির পরামর্শ থাকবে।(বটতলা থেকে অটোতে ৩০ টাকায় নীলগঞ্জ,সেখান থেকে ৫-৭ হেটে মন্দির)

গুরুদয়াল কলেজঃ
কলেজটি ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত।প্রথমে এর নাম “কিশোরগঞ্জ কলেজ” ছিল।১৯৪৫ সালে কৈবতর্রাজ গুরুদয়াল সরকার কলেজের জন্য আর্থিক সহায়তা দেন।তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকেই কলেজের নতুন নামকরণ করা হয় “গুরুদয়াল কলেজ”।
বিকেলে মানুষজন এখানে ঘুরতে আসে।এর সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার থেকে আশেপাশের ভাল দৃশ্য আপনার চোখে ধরা দিবে।আরো আছে,উম্মুক্ত মঞ্চ।(বটতলা থেকে ৩ মিনিটের হাটা দূরত্ব)

পাগলা মসজিদঃ
নরসুন্দা নদীর পাশে এর অবস্থান।দূর থেকে এর সৌন্দর্য আপনার চোখে ধরা দিবে।জনশ্রুতি আছে,এই মসজিদে নফল নামাজ আদায় করে ” মানত” করলে তা পূরণ হয়।এই বিশ্বাস থেকে মানুষ এই মসজিদে প্রচুর দানসদকা করেন।প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর এই মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়।আর প্রতিবার দানবাক্স থেকেই কোটি টাকার বেশী পাওয়া যায় সাথে প্রচুর বিদেশি পয়সা,স্বর্ন-অলংকার পাওয়া যায়।(গুরুদয়াল থেকে কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দিবে, হাটা দূরত্ব ১০ মিনিটের,অটোতে ভাড়া ৫ টাকা)

গাংগাটিয়া জমিদারবাড়িঃ
এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভোলানাথ চক্রবর্তী। বর্তমানে এখানে জমিদারের উত্তরাধিকারী মানব বাবু বসবাস করেন।তিনি পরিবার(তিনি,তার স্ত্রী এবং বোন) নিয়ে বসবাস করেন।মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী মানব বাবুর পিতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করে।এর সামনে রয়েছে বড় পুকুর।মূল তোরণ দিয়ে আপনি প্রবেশ করে জমিদারবাড়ি ঘুরে দেখতে পারবেন।(বটতলা থেকে অটোতে হোসেনপুর ৩০ টাকা,হোসেনপুর থেকে অটোতে ২৫ টাকায় গাংগাটিয়া জমিদারবাড়ি ?)

কিভাবে যাবেনঃঢাকা মহাখালী থেকে বাসে যেতে পারেন ভাড়া ২০০-২২০।তবে সবচেয়ে ভাল হয় ট্রেনে করে গেলে,বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সকাল ৭.৪৭ এ এগারো সিন্ধুর গোধূলি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।সারা দিন ঘুরে বাসে ব্যাক করতে পারেন।(আমাদের ট্রেনে যাওয়া হয়েছে তাই রুট প্লান শুরু হইছে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে)

খরচঃ৬০০-১০০০।

পরিশেষে বলতে চাই,আপনারা যেখানেই যাবেন,ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলবেন না।

লেখা ও ছবিঃ Ibrahim Khalil

চন্দ্রাবতীর মন্দির

জঙ্গলবাড়ি মসজিদ

জমিদারবাড়ির একাংশ

পাগলা মসজিদ