“পল্লীগ্রাম”- শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা রঙিন ছবি । সাজানো গোছানো সে ছবিতে থাকে সবুজের ছড়াছড়ি। থাকে হিজল, তমাল, কদম গাছ। সে গাছে থাকে পাখির বাসা। স্বচ্ছ পানির জলাধার, সান বাঁধানো পুকুর, পুকুর পাড়ে নারিকেল আর সুপারী গাছের সারি, বাঁশের সাঁকো। যান্ত্রিকতা যেখানে জীবনকে স্পর্শ করেনা। ছায়া সুনিবিড় এক মনোরম পরিবেশ, যেখানে বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ ওঠে। হয়তো সন্ধ্যা রাতে জ্বলে জোনাক ।
কল্পনার এই ছবিটির বাস্তবরূপ ঢাকার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত জিন্দা গ্রাম।
এই গ্রামটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে জিন্দা পার্ক নামের বিনোদন কেন্দ্র ।
আশির দশকে মাত্র পাঁচজন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রের উদ্যোগে সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করে “অগ্রপথিক পল্লী সমিতি “। তাদের স্বপ্ন আর শ্রমের ফসল আজকের জিন্দা পার্ক। সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে সদস্য সংখ্যা, বেড়েছে পুঁজি। গ্রামের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এই সমিতির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এই অগ্রপথিক পল্লী সমিতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং আহ্বায়ক জনাব তোবারক হোসাইন কুসুম। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন এর আদলে সাজাতে চেয়েছিলেন নিজেদের গ্রামটি। নাম দিতে চেয়েছিলেন শান্তিকানন। পরে অবশ্য গ্রামের নামানুসারে জিন্দা গ্রাম থেকে জিন্দা পার্ক নামটি এসেছে।
প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা গ্রামটিতে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, রয়েছে একটি রেস্তোরা । প্রায় ২৫০ প্রজাতির পঁচিশ হাজারের অধিক বৃক্ষের সমন্বয় পার্কটিকে দিয়েছে একটি নান্দনিক পরিবেশ। রয়েছে পাঁচটি বিশাল জলাধার।
কোনো সরকারি বা বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয়, নিজেদের চেষ্টায় কিভাবে একটি সাধারণ গ্রাম আদর্শ গ্রাম হয়ে উঠতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ জিন্দা পার্ক ।
যাওয়ার উপায়:
জিন্দা পার্ক, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা; পরিবার নিয়ে নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটানো এবং পিকনিকের জন্য এখন বেশ পরিচিত একটি জায়গা। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০০ফিটের রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত এসে হাতের বাঁদিকে গাজীপুরের দিকে যে রাস্তাটা গেছে, এই রাস্তায় ৪কিঃমিঃ এর মতো গেলেই জিন্দা পার্ক।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। গাড়িভেদে পার্কিং খরচ ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
কম বাজেটে যেতে চাইলে পাবলিক পরিবহনে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে কুড়িল বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যেতে হবে বাসে। টিকেট মূল্য ২৫ টাকা। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে জিন্দা পার্ক যাওয়ার জন্য অটো বাইক পাওয়া যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। রিকশা নিয়েও যেতে পারেন, ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সিএনজি নিয়েও সরাসরি পার্কে যাওয়া যায়, ভাড়া ৪০০ টাকা।
যেতে পারবেন উবার নিয়েও।
টিকেট: প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা, বাচ্চাদের টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। বাইরে থেকে খাবার নিয়ে পার্কে প্রবেশ করতে টিকেটের মূল্যের সাথে অতিরিক্ত ২৫ টাকা দিতে হবে জনপ্রতি । লাইব্রেরীতে প্রবেশের জন্য টিকেট মূল্য ১০টাকা ।
খাবার:
পার্কের ভেতরে খাবার জন্য রয়েছে মহুয়া রেস্তোরা। এখানে বিভিন্ন রকম দেশীয় খাবার পাওয়া যাবে। যার প্যাকেজ মূল্য জনপ্রতি ২২০ টাকা থেকে ৬৭০ টাকা।
পিকনিক এর জন্যও এখানে খাবার অর্ডার দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত দিনের অন্তত একদিন পূর্বে অর্ডার নিশ্চিত করতে হবে। যোগাযোগ: 01715025083, 01716260908
পার্কের বাইরেও কিছু খাবার হোটেল আছে, দাম তুলনামূলক কম।
এছাড়াও পার্কের ভেতরে ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, চটপটি, ফুচকা, আচার পাবেন। রয়েছে কফির ব্যবস্থাও। পার্কের ভেতরে প্রায় সব জায়গায় ডাস্টবিনের ব্যবস্থা আছে। সেগুলো ব্যবহার করুন, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।
নগর জীবনের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে কোলাহলমুক্ত পরিচ্ছন্ন সবুজে ঘেরা পরিবেশে পরিবার, প্রিয়জনের সাথে কিছুটা স্বস্তির সময় কাটানো যেতে পারে জিন্দা পার্কে।
লেখা ও ছবিঃ Toma Hasan

Zinda park
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.