অনেকেই আছেন যারা এডভেঞ্চার ট্রেভেলিং পছন্দ করেন। কিন্তু কখনো সময় আবার কখনো টাকার স্বল্পতার কারনে যেতে পারেন না ।
তাদেরকে বলছি, ১ দিন সময় নিয়ে ঘুরে আসুন খৈয়াছড়া ঝর্ণা তাও আবার ১০০০-১২০০ টাকায়। স্ট্যাম্প পেপারে লিখে দিবো, একবার গেলে আসতে ইচ্ছা করবে না।
কিভাবে যাবেন___:
খৈয়াছড়া যাওয়ার জন্য ২ টা রুট আছে । ট্রেনেও যেতে পারেন আবার বাসেও যেতে পারেন।
বাসে গেলে সরাসরি ঢাকা থেকে যেতে পারবেন। ঢাকার যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠবেন। যাওয়ার পথে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামবেন। পথে যানজট না থাকলে ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন মিরেরসরাই।
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে সোহাগ পরিবহন, গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, টি আর ট্রাভেলসের এসি বাস যায় চট্টগ্রাম। ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়া শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ইউনিক, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৮০ টাকা।
তবে আমি বলবো ট্রেনে যাওয়ার জন্য। এতে করে ট্রেকিং করতে গেলে ক্লান্ত হবেন না, খরচও হবে কম।
ট্রেনে যেতে হলে, কমলাপুর/বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী ঢাকা মেইল ট্রেনে উঠে পড়ুন। অনেকেই খরচ বাঁচানোর জন্য লোকাল সিটে করে যান, তবে আমি বলবো দল বেধে গেলে একটা কেবিন নিয়ে যান। ঝামেলা বিহীন আনন্দময় ট্রেন ভ্রমন। কমলাপুর/বিমানবন্দর কাউন্টারে কেবিনের টিকিট না পেলেও, ট্রেনের কাছে চলে যান। ২১২ নং বগিতে উঠে পড়ুন। দাড়ি ওয়ালা এক টিটি পাবেন, তার সাথে দরাদরি করেন একটা কেবিন নিতে পারেন।
যাত্রা পথে অনেক বিরতি পাবেন। গান, আড্ডা, খাওয়াদাওয়া সবই করতে পারবেন। তবে সময় নিয়ে ঘুমিয়ে নিন। সারাদিন অনেক হাটতে হবে।
সকাল ৬/৭ টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন ফেনী স্টেশনে। স্টেশন থেকে অটোতে করে চলে যান মহিপাল (ভাড়া ১০ টাকা)। মহিপালে নাস্তা করার জন্য রেস্টুরেন্ট পাবেন।
নাস্তা করে এপারেই বাসের জন্য অপেক্ষা করুন। বড়তাকিয়া বাজার যাওয়ার জন্য অনেক বাস পাবেন। তবে উঠার আগে দামদামি করে নিবেন। ১০০ টাকা চেয়ে বসবে, তবে আপনি বলবেন ৫০ টাকা (গুলিস্তান স্টাইল)।
মিরেরসরাই পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামবেন। নামার পর হাতের বামে খৈয়াছড়া যাওয়ার পাকা রাস্তা পাবেন।
চাইলে সিএনজি নিতে পারেন (ভাড়া ১৫ টাকা)। আমি বলবো হাটা শুরু করেন। অল্প একটু রাস্তা ভাড়া নাকি ১৫ টাকা, ডাকাইতের দল। কিছু দূর গেলে রেললাইন পাবেন । রেললাইন পার হলেই এবার কাচা রাস্তা। শুরুতেই একটা হোটেল পরবে।
কাপড় পাল্টে নিন আর কি খাবেন তা আগে অর্ডার করে যান। ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, মুরগি প্যাকেজ ১০০ টাকা।
সব ব্যাগ হোটেলে রেখে এবার হাটা শুরু করেন। সাথে ট্র্যাকিং এর জন্য একটা বাশ (৫-১০ টাকা) নিয়ে নিন।
প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো সাথে নিয়ে নিন যেমনঃ মোবাইল, ক্যামেরা, দড়ি, পলিথিন, শুকনা খাবার, বাশ। সামনে আরো দোকান পাবেন, চাইলে ওখান থেকেও খাবার নিতে পারেন।
আর একটা বিষয় আগেই বলে নেই, খৈয়াছড়া ঝর্ণা যেতে জোঁকের উপতদ্রপটা বেশি। জোঁক লাগবে কি লাগবে না, গ্যারান্টি দিতে পারছি না। তাই লবন নিয়ে নিন। জোঁক লাগলে লবন ছিটিয়ে দিলেই ছেরে দিবে।
প্রয়োজন হলে সেখান থেকে গাইডও নিয়ে নিতে পারেন, তবে নেয়ার দরকার হয় না।
ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা একটিই, আর পথে আরো অনেক অ্যাডভেঞ্চারপিয়াসীর দেখা পাবেন, কাজেই পথ হারানোর ভয় তেমন একটা নেই বললেই চলে।
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ ধরে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটলে দেখা পাবেন ঝর্ণার। হাতে সময় নিয়ে যাওয়া ভালো, ঝর্ণা দেখে ফিরতে ফিরতে বেশ সময় লাগবে।
সব মিলিয়ে মোট ১২ টা ঝর্ণা পাবেন। সময় থাকলে সব গুলো দেখে নিতে পারেন।
ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পাথরের যায়গা পিচ্ছিল থাকতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে। একেবারে ওপরের ধাপগুলো খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে তাই সেই ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হয়ে চলতে হবে। পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা না থাকলে ওপরে ওঠার চেষ্টা না করাই ভালো।
দুপুর ২-৩ টার মধ্যে ঝর্ণা দেখে হোটেলে ফিরে আসতে পারবেন। ফিরে এসে ভিজা কাপড় পাল্টে খেয়ে নিন।
হাতে সময় থাকলে বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ঘুরে আসতে পারেন। তবে এখন আর না যাওয়াই ভাল। দেখার কিছুই নেই ঘোলা পানি ছাড়া। আবার একটা সাইনবোর্ডও ঝুলাইছে।
যাইহোক, সব ঠিক থাকলে রাতের বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিন।
Happy Traveling….
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.