বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির ফোয়ারা বা গরম পানির কূপ বা একমাত্র গরম পানির প্রাকৃতিক খুম!

চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ড ট্রেইলের কয়েকশো বছর আগের পুরান ভাঙ্গা কালভৈরবী মন্দিরের ঠিক পাশেই এই গরম পানির ফোয়ারাটা’র অবস্থান। পানির উপর সবসময় আগুন জ্বলে এইভাবে। বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে মিথেন গ্যাসের কারণে সবসময় এখানে আগুন জ্বলে! সবসময় আগুন জ্বলার ফলে জায়গাটা পুরা আগুনের তাপে গরম হয়ে থাকে। আগুনের আঁচে ওইখানে দাঁড়ানোও যাচ্ছিল না! তবে একটা কথা বলতেই হয়, ফোয়ারাটা পাশে দাঁড়ানোর পর কেমন জানি একটা গা ছমছমে ভাব আসে!!(আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা, আগুনটা পানির উপর জ্বলতেছে। কোনো চুলা বা কয়লা দিয়ে আগুন টা জ্বালানো হচ্ছে না। আমার কাছে ভিডিও আছে, আমি দিতে পারতাম কিন্তু আমার ডকুমেন্টারি’র জন্যে লাগবে বলে ভিডিওটা দেই নাই!)
এই কালভৈরবী মন্দির আর এই গরম পানির ফোয়ারাটা নিয়ে অনেক অনেক ধরণের মিথ আর গল্প প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য, “এই মন্দিরে আগে নাকি একসময় নরবলি দেওয়া হতো!” তবে কালভৈরবী মন্দিরের যিনি পুরোহিত অর্থাৎ মন্দির’টির দেখাশোনা’র দায়িত্বে আছেন উনার সাথে এই গরম পানির ফোয়ারাটার ব্যাপারে কথা বলে যেটা জানতে পারলাম অর্থাৎ উনি যেটা বিশ্বাস করেন যে, কেনো এখানে সবসময় এভাবে আগুন জ্বলে আর গরম পানির ফোয়ারাটার কাহিনী!!
উনি আমাকে যেটা বললেন আমি সংক্ষেপ বলতেছি “পার্বতী, শিব ছিলেন স্বামী স্ত্রী। পার্বতীর বাবা একদিন শিবকে অপমান করেন। আর পার্বতী এটা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। শিব খবরটা পায় আর যখন পার্বতীকে এই অবস্থায় দেখেন তখন শুব রাগে পার্বতীকে নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। শিবের এই তান্ডব নৃত্যের কারণে তখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। ওইসময় বিষ্ণু শিবকে ঠান্ডা করার জন্যে যাতে পৃথিবী ধ্বংস না হয়, বিষ্ণুর চক্র দিয়ে পার্বতীর শরীরটাকে ৫১ভাগে ভাগ করেন। ওই ৫১টা টুকরার ১ভাগ পরছে এই সীতাকুণ্ডের বাড়বকুন্ডের এই জায়গাটায়। আর এই কারণেই সীতাকুণ্ড হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র একটা স্থান!”
এইটা উনার কাছে আমার শোনা! এইটা ওনাদের বিশ্বাস!!(দয়া করে এই ব্যাপারে কেউ তর্কে আসবেন না, কারণ এই ব্যাপারে আমার বিন্দু মাত্রও জ্ঞান নাই! যেই ব্যাপারে আমার কোনো জ্ঞান’ই নাই সেই ব্যাপারে কারো সাথে তর্ক করার কোনো মানে হয় না! আমি যেটা শুনছি সেটাই সবাইকে বললাম)

যাই হোক, বাড়বকুন্ড ট্রেইল খুব ছোট আর সহজ একটা ট্রেইল। কিন্তু দেখার মতন অনেক কিছুই আছে এইখানে৷ শত বছরের পুরানো কালভৈরবী মন্দির ছাড়াও আরো কিছু পুরানো ভাঙ্গা মন্দির, বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির ফোয়ারা সাথে কালভৈরবী মন্দির থেকে একটু সামনে আগাইলে ঝিরিপথের র‍্যুট আর এই ঝিরিপথ দিয়ে গেলেই দুই, তিনটা ছোট বড় ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়। বৃষ্টির সময় গেলে পানি পাওয়া যায় ঝর্ণা গুলাতে এছাড়া বেশীর ভাগ সময় শুকনাই থাকে। আড়াই থেকে তিন ঘন্টা যথেষ্ট এই ট্রেইলের সব কিছু দেখার জন্যে। তারপর এখান থেকে খুব সহজেই চট্টগ্রামের আরেকটা ট্রেইলে ঢুকে পরতে পারবেন। আমরা যেমন নাপিত্তাছড়া ট্রেইল +বাড়বকুন্ড ট্রেইল দুইটাই একদিনে কভার করছি!

[]কিভাবে যাবো?
১. যেকোনো জায়গা থেকে চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ড বাজার। সীতাকুণ্ডে পরেই বাড়বকুন্ড বাজার। ঢাকা থেকে বাসে আসলে একদম বাড়বকুন্ড বাজারেই নামতে পারবেন। ট্রেনে আসলে ভাঙ্গে ভাঙ্গে আসতে হবে বাড়বকুন্ড বাজারে।
২. বাড়বকুন্ড বাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে ঘুরলে, হাতের বাম দিকে একটা পাকা রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তা ধরে ৪০/৫০মিনিটের মতন হাঁটলেই কালভৈরবী মন্দির। বাজারের কাউকে জিজ্ঞাসা করলে দেখায় দিবে।
৩. যেতে দুই রকমের পথ পাবেন। একটা পাকা রাস্তা আর পাকা রাস্তা শেষে মাটির রাস্তা৷ রিক্সাতে পাকা রাস্তাটা যেতে পারবেন। কিন্তু মাটির রাস্তাটা একটু ঝামেলার আরকি  বৃষ্টির হইলে রাস্তাটা পুরা যেনো চোরাবালিতে রুপ নেয়! 

[]কী কী অবশ্যই মনে রাখবো?
১. বাড়বকুন্ড ট্রেইলে কোনো গাইড লাগবেনা । একদম সহজ পথ। রাস্তা ধরে সোজা হাঁটে যাবেন। ৪০/৫০মিনিটের মতন হাঁটলে কালভৈরবী মন্দিরে ওঠার সিঁড়ি দেখতে পাবেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই মন্দির।
২. দয়া করে ওইখানে গিয়ে কেউ কোনো ধরণের চিল্লাফাল্লা করবেন না কারণ ওইটা একটা তীর্থ স্থান।
৩. আরেকটা কথা, দয়া করে ওইখানে গিয়ে কেউ বিরিয়ানি খাবেন না। ওইটা বিরিয়ানি খায়ে প্যাকেট ফেলার জায়গা না!
৪. গরম পানির ফোয়ারাটায় যাওয়ার সময় খালি পায়ে যাবেন কারণ ওই জায়গাটাও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র একটা জায়গা। অতএব সম্মান করুন।
৫. ঝিরিপথের র‍্যুট’টা শুরু হয় মন্দিরের পাশ থেকেই।

তো, আপনার হাতে যদি একদিনো সময় থাকে এখনি বাইর হয়ে পরেন বাসা থেইকা কোনো এক অভিযানের উদ্দেশ্যে। নতুন অনেক কিছু জানতে পারবেন, নতুন অনেক কিছুই নিজের চোখে দেখতে পারবেন, বুঝতে পারবেন। আর আমাদের ইট পাথরে থাকা শহরের মানুষের বোরিং, ডিপ্রেশনে ভুগা লাইফে এইটা অনেক অনেক বেশী দরকার!!

বাংলাদেশ আমাদের দেশ আর এইসব অসাধারণ জায়গা গুলা আমাদের দেশের সম্পদ। তাই কোনো জায়গায় ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে আমাদের দেশের অসাধারণ সব সম্পদগুলা নষ্ট করবেন না দয়া করে।
হ্যাপি ট্রাভেলিং

লেখা ও ছবিঃ সাদমান সাকিব আয়ন