হাজারিখিল অভয়ারণ্যতে ক্যাম্পিং এবং হাজারিখিল ট্রেইল অভিযান
বনের মধ্যে ক্যাম্পিং, ট্রেইল, ঝর্ণা, পাহাড় ট্রেকিং! এক কথায় পারফেক্ট একটা অভিযান ছিল!
‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ জায়গাটা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ খুব একটা পরিচিত না। বাংলাদেশের কথা বাদ দিলাম চট্টগ্রাম এমনকি ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ যেখানে অবস্থিত ফটিকছড়ি, সেখানকার মানুষরাও এখনো ঠিক মতন চিনে না এই ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’। কিন্তু সেখানে গেলে আপনি বাংলাদেশের অন্যান্য টুরিস্ট স্পট গুলার থেকে অন্যরকম আলাদা একটা থ্রিল পাবেন! একদম শান্ত নিরিবিলি একটা জায়গা!যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য টুরিস্ট স্পটগুলাতে গেলে দেখা যায় মানুষ মানুষে একাকার, ময়লা আবর্জনা চারদিকে, জনবহুল এলাকা কিন্তু ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ একদম সম্পূর্ণ আলাদা।মানুষজনের আনাগোনা নাই বললেই চলে। শান্ত, নিরিবিলি, পরিষ্কার পরিচ্ছন একটা পরিবেশের মধ্যে বনে ক্যাম্পিং করতে পারবেন! ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ USAID এবং বন বিভাগ দ্বারা পরিচালিত একটা বন! আপনার ক্যাম্পিং’য়ের জন্যে যা যা লাগে সবকিছু ওরাই ব্যবস্থা করবে!
তাছাড়া আপনি যদি ক্যাম্পিং করতে না চান শুধু ঘুরতে চান সেক্ষেত্রে সেখানে ঘুরার জন্যে বন জঙ্গলের এলাকা আছে, চা বাগান আছে! ট্রি অ্যাডভেঞ্চার আছে! আর সবথেকে বড় ব্যাপার যেইটা, সেখান থেকেই শুরু ‘হাজারিখিল ট্রেইল’! মোটামুটি ৭/৮কিলোমিটারের ভয়ংকর এই হাজারিখিল ট্রেইল! ট্রেইলটা শেষ হয় ‘কালাপানি’ ঝর্ণাতে। অসাধারণ এই হাজারিখিল ট্রেইলটা। প্রকৃতির মায়াময় রুপ দেখা যায় এখানে গেলে। যদিও এখনো বৃষ্টির সময় শুরু হয় নাই তারপরো কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে হাঁটু সমান, গলা সমান পানি পাড় হয়ে সামনে আগাইতে হয়। হাজারিখিল ট্রেইলে ঢুকলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনি ঝিরিপথ, ক্যাসকেডর মধ্য দিয়ে ইমোশনাল হয়ে সামনে হাঁটতেই থাকবেন খালি। ঝিরিপথ, ক্যাসকেডের এক একটা মোড় পার হয়ে যতই সামনে আগাবেন ততই অবাক হবেন কারণ এতোটা অসাধারণ সুন্দর এই হাজারিখিল ট্রেইল’টা।
কিভাবে যাবো?
১।ঢাকা থেকে বাস/ট্রেনে চট্টগ্রাম। তারপর অক্সিজেন। এখান থেকে বাসে করে ফটিকছড়ি। ভাড়া(৩৫/৪০নিবে)। ফটিকছড়ি ফুলকলি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে হাজারিখিলের সিএনজি পাওয়া যায়।। (ভাড়া ৪০টাকা নিবে) বলবেন একদম ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্যের’ গেটে নামায় দিতে। নাইলে বাজারে নামায় দিবে। এখান থেকে আরো ১০/১৫মিনিটের হাঁটা পথ হাজারিখিল ।
২। অক্সিজেন থেকে হাজারিখিলে পৌছাইতে ৩/৪ঘন্টার মতন লাগে।
৩।ফিরার সময় ঠিক একি পথ। হাজারিখিল অভয়ারণ্য>ফটিকছড়ি>চট্টগ্রাম।
তবে এবার একটু বলি। আমাদের প্ল্যানটা ছিল একটু এক্সট্রিম। আমরা হাজারিখিল অভয়ারণ্যতে রাতে ক্যাম্পিং করবো, তারপর সকালে হাজারিখিল ট্রেইলে ঢুকে, কালাপানি ঝর্না দেখে ব্যাক করে একটা ছোট পাহাড় ট্রেকিং করে বাড়ৈয়াঢালা হয়ে বড় দারোগার হাট দিয়ে বের হবো। অর্থাৎ প্রায় ৩০কিলোমিটারের বেশী হাঁটা পথ এবং পাহাড় ট্রেকিং। আমরা রওয়ানা দিছিলাম সকাল ৯টায় আর বড় দারোগার হাটে যখন পৌঁছাই তখন বাজে সন্ধ্যা ৭টা।
তবে আপনারা ইচ্ছা করলে আবার ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’তেও ফিরতে পারবেন।
৪। হাজারিখিল ট্রেইলে গাইড নিতেও পারেন নাও নিতে পারেন। যদি গাইড নিতে চান তাহলে মাহবুব মামা: ০১৬৩৬৭০৬৯৭৮
গাইড হাজারিখিল থেকে কালাপানি ঝর্না হয়ে আবার হাজারিখিল পৌঁছায় দিবে;৫০০টাকা নিবে।
আর যদি হাজারিখিল থেকে কালাপানি ঝর্না ঘুরে বাড়ৈয়াঢালা হয়ে বড় দারোগার হাট দিয়ে বের হতে চান তাহলে;৮০০/৯০০নিবে।
যদি আপনাদের শুধু হাজারিখিল ট্রেইল এবং ট্রি অ্যাডভেঞ্চারের প্ল্যান থাকে সেক্ষেত্রে একদম সকালে হাজারিখিলে যাবেন।নতুবা ট্রেইল শেষ করে চট্টগ্রামে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে।
কি কি মনে রাখবো?
১। যদি হাজারিখিল অভয়ারণ্যতে ক্যাম্পিং করতে চান সেক্ষেত্রে আশীষ ভাই (০১৮১৭২৭৩৭৪০) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। উনি হাজারিখিলের দায়িত্বে আছেন।
২। আশীষ ভাইয়ের সাথে কথা বলেই সব ঠিক করবেন আপনারা কয়জন যাচ্ছেন, কি খাবেন, ক্যাম্পিংএর ব্যাপারে বিস্তারিত সব কিছু। এক তাবুতে দুইজন থাকতে পারবেন। আমাদের পার হেড খরচ হয়েছিল(তাবু+বারবিকিউ+ক্যাম্প ফায়ারের জন্যে খড়ি+হাজারিখিলের জন্যে একজন গাইড যিনি তাবু থেকে শুরু করে বারবিকিউ সব কিছুতে হেল্প করবেন এবং রাতে পাহারা দিবেন) ৪৫০এর মতন।
৩। আর যদি শুধু ট্রেইলের প্ল্যান থাকে তাহলে হাজারিখিল ফিরে খাওয়াদাওয়া’র জন্যে আশীষ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা বাজারে গিয়েও খেতে পারেন
৪। ট্রি অ্যাডভেঞ্চার ১০০ টাকা”
৫। এই ট্রেইলে জোঁক আছে অনেক। তাই লবণ, সরিষার তেল রাখতে পারেন
৬। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি লাগবে। তাই আগেই পানি কিনে নিয়ে যাবেন হাজারিখিল থেকে।
৭। অনেক জায়গা আছে যেখানে হাঁটু, গলা সমান পানি এবং অনেক বেশী পিচ্ছিল পথ।তাই একটু সতর্ক থাকে নিরাপদ ভাবে চলাচল করবেন।
আমরা ছিলাম ১৩জন। আমাদের ঢাকা থেকে বাসে যাওয়া আসা সব সহ পার হেড ২২০০র মতন খরচ হয়েছিল।
ত আর দেরি কেন, যারা বন জঙ্গলের মধ্যে রাতে থাকতে চান, বন্য জঙ্গলের শান্তশিষ্ট, নিরিবিলি পরিবেশ এবং ফকফকা জোছনা রাতে ক্যাম্পিং করতে চান, মায়াময় প্রকৃতির মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে হাঁটতে চান তাদের জন্যে ‘হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ এক কথার পারফেক্ট একটা জায়গা!
বাংলাদেশ আমাদের দেশ এবং এইসব টুরিস্ট জায়গাগুলা আমাদের দেশের সম্পদ। তাই ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে দেশের সম্পদ নষ্ট করবেন না।
হ্যাপি ট্রাভেলিং
লেখা ও ছবিঃ সাদমান সাকিব আয়ন
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.