মেঘের ভেলায় – পাহাড় চুড়ায় তাবু বাস !!
মারায়নতং, আলিকদম, বান্দরবান ।
সময়ঃ এপ্রিল,২০১৮। তখন কিছুটা শুষ্ক মৌসুমে সবুজ ভাব কম ছিল। কিন্তু এখন পুরাটাই সবুজ আর প্রচুর মেঘ।
খরচ: আমাদের ২০০০ এর কিছু কম বা সমান লেগেছিল।
পাহাড় চুড়ায় তাবু বাস কথাটা শুনলেই কেমন একটা রোমাঞ্চ অনুভত হতে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মন চাইলেই যখন তখন আপনি কোন এক পাহাড়ে গিয়ে তাবু বাস করতে পারবেন না। এর সবচেয়ে বড় কারন নিরাপত্তা, আর সেই সাথে যাতায়াত বা যোগাযোগ ব্যাবস্থা।
সহজে যাওয়া যায় এরকম পাহাড় বলতে সবাই তাই প্রথমেই প্রেফার করেন সাজেক ভ্যালি। কিন্তু সাজেক এ সেই বন্য পরিবেশ এখন একদম ই আর নেই। একের পর এক রিসোর্ট নির্মান, পাহাড়িদের উচ্ছেদ, বৃক্ষ নিধন, শহরায়ন, সব মিলিয়ে সাজেক এখন একটি বানিজ্যিক পর্যটন এলাকা। তাই সামনে যারা প্ল্যান করছেন ছুটিতে কোন পাহাড় ঘুরতে যাবেন তারা একদম ই ভিন্ন স্বাদ গ্রহনের জন্যে তাবু বাস করতে চলে যেতে পারেন বান্দরবানের আলিকদমে অবস্থিত মারায়নতং এ। মারায়নতং আমার কাছে একদম ভিন্ন ধর্মি একটা পাহাড় মনে হয়েছে। পাহাড়ের চুড়ায় বিশাল বৌদ্ধের মুর্তি দেখে কিছুটা ভূটান এর বুদ্ধা পইন্ট এর মত লেগেছে। পাহাড়টা যেমন নিরিবিলি। এর সুর্যদয় আর সুর্যাস্ত টা আরো বেশি অসাধারন। সবচেয়ে ভালো লাগে সকাল বেলায় বিশাল মেঘের ভেলায় হারিয়ে যাওয়া। যারা হাল্কা ট্রেকিং পছন্দ করেন বা নতুন ট্রেকিং শুরু করেছেন, তাদের জন্যে তো সর্বোত্তম জায়গা ।
কেন আপনি মারায়নতং এ যাবেন ?
১। যথেষ্ট নিরাপদ আর নিরিবিলি পরিবেশে তাবুবাস করতে পারবেন।
২। আর্মি প্রশাসনের ঝামেলা নেই।
৩। মাত্র ২০০০-২৫০০ টাকা খরচে ২ দিন সময় হাতে নিয়েই ঘুরে আসতে পারবেন।
৪। মারায়নতং থেকে আপনি একি সাথে প্রায় বান্দরবানের পুরো দক্ষিন অংশের সব পাহার দেখতে তো পারবেন ই সেই সাথে কক্সবাজার এর সমুদ্র ও দেখতে পারবেন।
৫। ১৬০০ ফিট উচ্চতার এই পাহাড় থেকে নিচের ভিউ টা অসাধারন সুন্দর। কারন পাহাড় চুড়া থেকে সরাসরি সমতল ভুমি দেখা যায়।
৬। মারানয়তং এর চুড়ায় ভোর বেলা প্রচুর মেঘ ভিড় করে। সেই মেঘের আড়াল থেকে যখন সুর্য উদয় হয় সত্যিই সেই দৃশ্য দেখার মত।
৭। মারায়নতং এ চুড়ায় যাওয়ার পথে পেয়ে যাবেন আদিবাসি মুরং পাড়া। তাদের বৈচিত্রময় সাধারন জীবনযাপন অনেক কাছ থেকে দেখতে পারবেন।
৮।মারায়নতং এর চুড়ায় কোন লোকালয় নেই, কোন ঘর বাড়িও নেই তাই একদম নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন।
৯। ট্রেকিং এর রাস্তা অনেক সহজ মাত্র ৩ ঘন্টা হেলে দুলে ট্রেকিং করলেই আপনি চুড়ায় পৌছে যেতে পারবেন।
এবার আসা যাক কিভাবে আপনি মারায়ানতং যাবেনঃ
যদিও মারায়নতং বান্দরবানে অবস্থিত, কিন্তু সেখানে যেতে হলে অবশ্যই আপনাকে কক্সবাজারের চকরিয়া দিয়ে যেতে হবে। তাই প্রথমে বাসে করে আপনি ঢাকা থেকে চকরিয়া আসবেন, কক্সবাজার এর সব বাসই চকরিয়া নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে জীপ ভাড়া করে যাবেন সরা সরি আলিকদম এর আবাসিক এ ।তবে বর্তমানে হানিফের ঢাকা থেকে আলিকদম এর সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। আপনি সেভাবেও আসতে পারেন। পরে সেখানে যে কাওকে জিজ্ঞাস করলেই দেখিয়ে দিবে মারায়নতং যাবার রাস্তা। কোন গাইডের প্রয়োজন নেই। আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনে গিয়েছিলাম, তার পর সেখান থেকে বাসে চকরিয়া হয়ে ,জিপে করে আলিকদম যাই।
খরচঃ ঢাকা থেকে- চকরিয়াঃ ৮০০-৯০০টাকা নন এসি
চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়াঃ ১৫০-১৮০
চকরিয়া থেকে আলিকদম আবাসিক জিপ ভাড়া ১২০০ টাকা । ১০-১২ জন উঠতে পারবেন।
যেসকল বিষয় মাথায় রাখতে হবেঃ
১। মারায়নতং এ কোন বিদ্যুর গ্যাস পানি কিচ্ছু নেই। তাই ভালো পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিয়ে যাবেন। আর আবাসিক থেকে পানি যাওয়া আসার জন্যে যা খাবেন পুরাটাই কিনে বহন করে নিয়ে যেতে হবে।
২। যেহেতু তাবু বাস করবেন তাই অবশ্যই তাবু ঢাকা থেকে কিনে অথবা ভাড়া নিয়ে যাবেন।
৩।আবাসিক এর পর আর কোথাও কোন দোকান পাবেন না। খাবার এর ও ব্যাবস্থা নেই। তাই যা যা খাবেন আবাসিক এর দোকান থেকেই কিনে নিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে মুড়ি চিড়া বিস্কিট কেক এধরনের খাবার নেওয়া ভালো। তবে আপ্নারা যদি গাইড আগে থেকে ঠিক করে রাখেন তাকে আগে থেকে বলে দিলেই উনি সব রান্নার ব্যাবস্থা করে দিবেন।
৪।চুড়ায় কোন ওয়াশ রুম পাবেন না। তাই প্রকৃতিতেই প্রাকৃতিক কাজ সারার মানুষিক প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন।
৫। স্যালাইন, ফার্স্ট এইড, চকলেট, চাকু আর অবশ্যই অবশ্যই টর্চ লাইট সাথে রাখবেন।
৬। যেহেতু ক্যাম্পিং এর তাবু , আর রসদ পত্র সব বহন করে ট্রেকিং করতে হবে। তাই অবশ্যই কেউ ভারি ব্যাগ নিয়ে এই পথে যাত্রা করবেন না।
মারায়নতং ভ্রমণে কিছু সতর্কতাঃ
১। মনে রাখবেন মারায়ানতং এর চুড়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বি দের কাছে ততটাই পবিত্র যতটা আমাদের কাছে আমাদের মসজিজ মন্দিত বা গির্জা। তাই সেখানে যতেষ্ট শালিনতা নজায় রাখবেন। আর একটা ধর্মিয় উপাসনা ক্ষেত্রে কি করা উচিত কি উচিত না আসা করি আমরা সকলেই জানি।
২।মুরং আদিবাসিরা বেশিরভাগ এ অর্ধ নগ্ন অবস্থায় থাকে। তাদের দেখে হাসা হাসি , বা তাদের ছবি তুলার চেষ্টা তো করবেন ই না। বরং যে করবে তাকেও বাধা দিবেন।
৩। ক্যাম্পিংটা অবশ্যই বৌদ্ধ মুর্তি গুলো থেকে এক্টূ দূরে করবেন।আর ক্যাম্পিং এর পর যাবতিয় সকম ময়লা আবর্জনা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবেন।
৪। যেহেতু পাহাড়ে টয়লেট নেই তাই। প্রাকৃতিক কাজ প্রকৃতিতেই করবেন তবে সেটা অবশ্যই নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে এবং তা কোন ভাবেই যেন মুল চুড়াতে না হয়।
লেখা ও ছবিঃ Pearl Matthew
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.