প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা হচ্ছে ভোলা দ্বীপ থেকে প্রায় ৮০ কিঃ মিঃ দুরত্বে সাগরের বুকে নয়নাভিরাম আরেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। মনগাজী নামে এখানকার এক লোক একদা বাঘের আক্রমনে নিহত হন। তার নামানুসারে “মনপুরা” নামকরন করা হয়।

বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ-শ্যামল ঘেরা মনপুরা। সুবিশাল নদী, চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগানে সমৃদ্ধ। মেঘনার কোল ঘেসে জেগে ওঠা তিন দিকে মেঘনা আর একদিকে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ সাজে সজ্জিত লীলাভূমি মনপুরা।

০৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ পিপাসু মানুষের চারণভূমি বলা চলে। অবসর সময়ে এই দ্বীপে ছুটে আসে অনেক পর্যটক। চাইলে আপনিও যেকোনো সময় চলে আসতে পারেন মনপুরা দ্বীপে।
মেঘনার কোল ঘেসে এখানে না আসলে বোঝাই যাবেনা সবুজের দ্বীপ মনপুরায় কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের কি অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে পুরানো এ দ্বীপে। পর্যটক আর ভ্রমন পিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার বহু উপকরন রয়েছে এ দ্বীপে।

প্রতি বছর শীতে শত শত পর্যটক ভীর করে এ উপজেলার নয়নাবিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এ উপজেলা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটে ট্রলার যোগে নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। উপজেলা সদরে আবাসিক হোটেল ছাড়াও এখানে রয়েছে
জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাকবাংলো, কারিতাস ডাক বাংলো প্রভৃতি।

এখানে সকাল বেলার সুর্য যেমন হাঁসতে হাঁসতে পুর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরাতে এসেই কেবল সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়।

মনপুরা উপজেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণীঃ
দ্বীপের নাম:- মনপুরা
বিভাগ:- বরিশাল
জেলা:- ভোলা

আয়তন:– ৩৭৩.১৯ বর্গকিমি।

স্থানাঙ:– ২২°১৭′৫৫″উত্তর
৯০°৫৮′৪৫″পূর্ব /
২২.২৯৮৬° উত্তর
৯০.৯৭৯২° পূর্ব।

প্রশাসনিক এলাকা:– মনপুরাতে ৪ টি ইউনিয়ন, ২২ টি মৌজা ও ৩৩ টি গ্রাম আছে।

ইউনিয়ন সমূহ – মনপুরা , হাজিরহাট , উত্তর সাকুচিয়া এবং দক্ষিণ সাকুচিয়া।

অবস্থান:– এই উপজেলার উত্তরে মেঘনা নদী ; পূর্বে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা ; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে তজমুদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা ।

সংক্ষিপ্ত:– মনপুরা দ্বীপের রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ৬০০ বছর পূর্বে পর্তুগীজ দস্যুরা এই দ্বীপে আশ্রয় নিত। পর্তুগীজদের প্রস্থানের পর ভোলা, লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী থেকে মানুষজন এই দ্বীপে এসে বাস করতে শুরু করে। বাংলাদেশের দক্ষিনে অবস্থিত এই দ্বীপটির আয়তন ৩৭৩.১৯ কিলোমিটার এবং বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় এক লাখ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতে ভরপুর এই দ্বীপটির অবস্থান একটু দুর্গম হলেও আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিন্ন রূপ দেখতে এবং তাঁর স্বাদ নিতে চান তবে এই দ্বীপে বেড়াতে আসতে পারেন।

চলাচলঃ
১। মোটর সাইকেল অথবা স্থানীয় “টেম্পু” নামে পরিচিত ইজিবাইকে চড়ে আপনি পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারেন।
২। আপনি বনে এবং নদীর পাড়ে ঘুরতে পারেন, নৌকা ভ্রমন করতে পারেন এবং নদীতে মাছ ধরতে পারেন।
৩। ছবি তুলতে পারেন।
….
যাতায়াত খরচঃ
জনপ্রতি ঢাকা থেকে লঞ্চ ভারাঃ-
ডেক-২০০ টাকা।
সিঙ্গেল কেবিন -১০০০ টাকা।

যাতায়াতঃ
ঢাকা থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় হাতিয়ার উদ্দেশ্য দুটি করে লঞ্চ ছেড়ে যায়।
তাসরিফ–১/২
ফারহান–৩/৪
সকাল ৬ টায় মনপুরা দ্বীপে ঘাট দেয়।

থাকার ব্যাবস্থাঃ
উপজেলা সদরে আবাসিক হোটেল ছাড়াও এখানে রয়েছে,জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাকবাংলো, কারিতাস ডাক বাংলো প্রভৃতি।থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন, প্রতি রুম ৫০০ – ৬০০ টাকা। ৪ থেকে ৫ জন থাকতে পারবেন।

মনপুরার খাবারঃ
এখানে বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ করা যায়। শীতের হাঁস, মহিষের দুধের দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা। অনেকের মতে এখানকার খাটি দুধ খেয়ে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা দেখে মানুষের মন ভরে যেত। এজন্য এর নামকরণ করা হয় মনপুরা।

মনপুরা দ্বীপ ও নিঝুম দ্বীপ ঘুরতে খরচ পরবে ৩ রাত ২ দিন জনপ্রতি- ৩০০০ টাকা।
(আসা-যাওয়া ২ রাত,মনপুরা একরাত।)

সে যাই হোক না কেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা দ্বীপের রূপের বর্ণনা লিখে শেষ করা যাবেনা। সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতায় এই দ্বীপ হয়ে উঠতে পারে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন সমৃদ্ধ একটি দ্বীপ।

দ্বীপ কন্যা মনপুরার অপার শোভা আমরা দেখেছি যা আমাদেরকে তার মতো সুন্দর হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। মনপুরার আতিথীয়তা আমাদের মহৎ হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। মনপুরার ভ্রাতৃত্ববোধ আমাদের অপরকে ভালোবাসতে শেখায়। সর্বপরি মনপুরা আমাদের মানুষ হতে শেখায়।

বিঃদ্রঃ আমরা যারা ভ্রমণ পিপাসু কোথায় ঘুরে গেলে দয়া করে পরিবেশের উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পরবে এমন কাজ করবো না। বিশেষ করে খাবারের প্যাকেট,পানির বোতল এগুলো যেখানে সেখানে ফেলবো না,নিদিষ্ট স্থানে ফেলবো,পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবো

লেখাঃ Rifat Rudro

ছবিঃ Md Shahadat Hossain

হাজিরহাট

মনপুরা দ্বীপ