ঘুরে আসুন মহেরা জমিদার বাড়ী ও যমুনার পাড় ( বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশ )

আগেই বলে রাখি পোস্টটা অনেক বড় আর যাওয়া-আসার সকল খুঁটিনাটি লেখা , কারো ওদিকে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে অবশ্যই পুরোটা পড়বেন ।

সকালে এই ২ টি প্লেস কভার দেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম । আমার মনে হয় বাংলাদেশে এর থেকে সুন্দর-পরিপাটি জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর আর দ্বিতীয়টি নেই । এলাকাটিতে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার অবস্থিত তাই তাদের তত্বাবধায়নে রয়েছে পুরো এরিয়াটি । ফুলের বাগান,বসার স্থান,শিশুদের পার্ক,ছোটখাটো চিড়িয়াখানা ও সংস্কারকৃত বাড়িগুলো এর আকর্ষন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । প্রতিটি যায়গায় পুলিশ পাহারায় থাকে, তাই সবকিছু যেমন গোছালো,তেমনি পরিস্কার । ছবি তোলার জন্যে লনে ঝাড়ফুক না দিয়ে বসে পড়লেও চলে বলা যায় 
জমিদার বাড়ি দেখা শেষে সেখান থেকে চলে যাই যমুনা ব্রীজ দেখতে । যদিও চেয়েছিলাম বিকালের দৃশ্য উপভোগ করতে,কিন্তু কারনবশত আমাদের যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,ওইদিকে রিসোর্টের গেটও বন্ধ । পরে ভ্যানচালক আমাদের নিয়ে যায় একেবারে শেষ মাথায় , ওখান থেকে হাটতে হাটতে নদীর কিনারে চলে যাই,আর ধরা পড়ে এই দৃশ্য,যদিও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা,তবুও একটু ভয় লাগে কারন অন্ধকার পুরো,আর আশেপাশে আমরা ২ বন্ধু ছাড়া কেউ নেই । সেখান থেকে বেড়িয়ে আবার চলে আসি রেলস্টেশনে,সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকা । আসুন বলি কিভাবে যাওয়া যাবে,খরচ কেমন হবে –
প্রথমে মহেরা গেলে-
১, মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল এর বাস আছে ( নিরালা,ধলেশ্বরী) নিরালায় ভাড়া ১৫০ টাকার মত, আমরা মহাখালী নেমেই ধলেশ্বরী পাই,আর প্রথম কাস্টমার হওয়ায় আমাদের থেকে ৯০ টাকা করে ভাড়া নেয় । কল্যানপুর-গাবতলী থেকে এসি বাসও আছে, ২৫০ টাকা ভাড়া ( সকাল-সন্ধ্যা,সোনিয়া)
২. এছাড়া আবদুল্লাহপুর চলে যান,সেখান থেকেও যেকোন উত্তরবঙ্গের গাড়ীতে চড়ে বসুন ,ভাড়া ১০০-২০০ নিতে পারে যদি বাসে উঠায় আর বাসের অপারেটর ভেদে ।
৩. মতিঝিল থেকে ওয়েলকাম,সাইনবোর্ড থেকে ঠিকানা,মিরপুর থেকে ইতিহাস ইত্যাদি বাসে করে চন্দ্রা চলে আসুন,এখান থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে উঠুন,৫০ টাকা নিবে । বলে রাখি,যেই বাস মহাখালী/আবদুল্লাহপুর এ পাবেন,সেই বাসই চন্দ্রা থেকে পাবেন 

বাসে তো উঠলেন এবার হেলপার/সুপারভাইজার কে বলে রাখেন মহেরা পুলিশ লাইন যাবেন । আপনার যাত্রাপথে হাতের ডানপাশে পড়বে,সেখানে তারা নামিয়ে দিবে,নেমে রাস্তা পার হয়ে ১৫ টাকা করে শেয়ার সিএনজি তে মহেরা ।
ভিতরে প্রবেশের জন্যে টিকেট ৫০ টাকা । তাদের খাবারের ব্যবস্থা আছে, টিকেট কাউন্টার থেকেই খাবারের মেনু সম্বলিত কাগজ দিয়ে দেবে, ১২ টার মধ্যে অর্ডার করে ফেলবেন অবশ্যই । তাছাড়া শুকনো খাবারও পাওয়া যায় ।

মহেরা টু বঙ্গবন্ধু সেতু –

মহেরা থেকে বেড়িয়ে রিকশা থাকলে রিকশা নেন,অথবা সিএনজি কে বলুন নাটিয়াপাড়া যাবেন,ওটা হলো বাসের স্টপেজ,কোন না কোন বাস থামাবেই । রিকশা রিসার্ভে ৬০ টাকা নিবে,সিএনজিতে ২০/২৫ নিতে পারে ।
ওখানে নেমে এবার টাঙ্গাইল বাদে যেকোন বাস আসলে হাত ইশারা করুন,বাসের দয়া হলে থামাবে,আর যাত্রী নেয়ার জন্য উৎসুক থাকলে আপনারেই টানাটানি করবে । যাইহোক আমাদের কপালে দয়ার বাসই পড়ে,হাত দেখানোর পর একটু দূরে থামায়,দৌড়ে বাসে উঠে পড়ি । বাসে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন ব্রীজের এইপাড় নামবেন,ভাড়া কত । ১৫০/২০০ চাইবে,ভয় পাবেন না । ১০০ বলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকুন,আপনাকে নেবেই । এছাড়া টাঙ্গাইল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ব্রীজের এইপাড় যেতে পারেন,সেক্ষেত্রে ৪০/৫০ টাকা লাগবে,কিন্তু লোকাল হওয়ায় সময় লাগবে বেশী । আমরা ২ জনে ১৫০ টাকা দেই ভাড়া,আর পৌছাতে ৪০/৫০ মিনিট লাগে,তাও বাসের স্পিড ছিল ৮০ kmph
বাসের হেলপার/সুপারভাইজার কে বলে রাখুন রিসোর্ট এ যাবেন,তারা আপনাকে ব্রীজের আগে গোল চত্বরে নামিয়ে দিবে । নেমে ভ্যানে চড়ে ১০ টাকা দিয়ে চলে যান পার্কের ভিতর,বলে নিয়েন ব্রীজ দেখতে যাবেন । ওখানে ঘোরাঘুরি শেষে ভ্যান নিয়ে রেলস্টেশন চলে যান,ঢাকাগামী ট্রেন এ চলে আসুন । আমাদের জন্যে একটাই ট্রেন ছিল, ৭ঃ৩০ টায় , ১৩৫ টাকা ভাড়া ,সিট সব বুক আগে থেকেই। এত রাস্তা তো দাড়িয়ে আসা যায়না তাই শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজায় বসে ঢাকা চলে আসি , হয়ত হাত পায়ের তাপমাত্রা মাইনাস এ নেমে গিয়েছিল 

আমাদের খরচ ছিল এরকম (একজন এর খরচ লিখলাম) – বাসা-মহাখালী (২০)+ টাঙ্গাইল বাস (৯০)+মহেরা সিএনজি(১৫)+টিকেট(৫০)+মেইন রোড পর্যন্ত রিকশা (৬০)+ যমুনা পর্যন্ত বাস(৭৫)+যমুনার পাড় ভ্যানে যেতে(২০)+রেলস্টেশন আসতে(৩০)+ট্রেনে ঢাকা(১৩৫) = ৪৯৫ টাকা । ট্রেন বাসার কাছে ব্রেক দেয়ায় বাসায় আসতে ভাড়া লাগেনি 

আপনারা যা করবেন –
* অবশ্যই খুব সকালে রওয়ানা দিবেন , ৬ঃ৩০ টার মধ্যে,এতে করে রাস্তায় হালকা জ্যাম থাকলেও মহেরা ১১ টার মধ্যে পৌছাবেন । যাওয়ার জন্যে ট্রেনও আছে,কিন্তু গতকাল ( সোমবার ) সকাল ৮ টার ট্রেনের অফডে ছিল যার জন্যে বাসে যাওয়া লাগে । ট্রেন শিডিউল লাগলে কমেন্টে বলবেন,দিয়ে দিবো । ট্রেনে ঢাকা থেকে গেলে মির্জাপুর নেমে মেইন রোডে এসে মহেরা যাবেন,আর টাঙ্গাইল নামলে সেখান থেকে গাজীপুর/চন্দ্রা/ঢাকাগামী বাসে উঠে মহেরা নামবেন । ওটা আমার মনে ঝামেলাপূর্ন ।
* ছবি তোলেন,ঘোরাঘুরি করেন,খাবার গ্রহন করেন সমস্যা নেই ।মহেরা থেকে ২ টার মধ্যে বের হয়ে যান। কারন মেইন রাস্তায় গেলে বাস কোনটা পাবেন,আর কখন পাবেন গ্যারান্টি নেই। আমরা ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
* বাস এ রেলস্টেশনেই নেমে যান,আর খোঁজ নিন ঢাকাগামী ট্রেন কখন কখন আছে । আমরা ৬ঃ৩০ এ একটা ট্রেন ছিল বলে জানতাম,ঘোরাঘুরির পর কাউন্টারে গিয়ে দেখি একটাই ট্রেন আছে,৭ঃ৩০ টায় । ট্রেনের খবর নিয়ে গেলে কতক্ষন ঘুরতে পারবেন তার আন্দাজ হবে । ট্রেন স্টেশন থেকেও ভ্যানে রিসোর্টে যেতে পারেন ।
* যদি সেখান থেকে বাসে আসতে চান তাহলে ডাইরেক্ট বাস সহজে পাবেন না । এর জন্যে প্রথমে লেগুনাতে এলেঙ্গা,এরপর সেখানে বাস ঢাকাগামী বাস ।
* পোস্ট পড়ে বেশী টেনশনে পড়ে গেলে গাড়ীভাড়া করে চলে যান , বড় গ্রুপ গেলে খরচ পুষিয়ে যাবে।

আর হ্যা ভাই/বোন । অবশ্যই মহেরা ও যমুনার পাড় কোনটাই ময়লা/আবর্জনা ফেলে অপরিস্কার করবেন না । মহেরা পুলিশের এরিয়া , আর যমুনার তীর আর্মি এরিয়া । অপরিস্কার করবেন তো জরিমানাও দিতে হবে।

লেখা ও ছবি ঃ Apu Chandra Das

mohera-jomidar-bari