কাশ্মির ভ্রমণের গল্প শুনাবো
বাজেট ট্রাভেলার দের উপকারে আসবে
কাশ্মির ভ্রমণ শেষ করার পর আমার উক্তি ,”পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের তাঁর জীবদ্দশায় অন্তত একবার কাশ্মির যাওয়া উচিত।”
ছোট বেলায় বইতে, পত্রিকায় ও টিভিতে কাশ্মির নিয়ে অনেক পড়েছি বা দেখেছি। অনেকে কাশ্মিরকে পৃথিবীর ভূসর্গ বলেছেন, আবার অনেকে সুইজারল্যান্ডের চাইতেও সুন্দর বলেছেন। এইসব পড়তে পড়তে বা দেখতে দেখতে নিজের মানসপটে ও একধরনের আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে কাশ্মির নিয়ে। তাছাড়া কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের শতাব্দী প্রাচীন ঝগড়া তো আছেই। কাশ্মির যেহেতু বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত, তাই মজবুত পরিকল্পনা ছাড়া আগানো ঠিক হবে না! তাছাড়া আমি যেহেতু বাজেট ট্রাভেলার তাই সেভাবেই সবকিছুই পরিকল্পনা করেই এগুতে হচ্ছে। পরিকল্পনামত ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করা হলো এবং ১০ দিনের ভিতর ১ বছরের ভিসা ও পেয়ে গেলাম। আমরা ৩ জন কাশ্মির যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তারপর এক মাস আগে বাংলাদেশে অবস্থিত এক এজেন্ট থেকে কলকাতা টু জম্মু যাওয়া – আসার নন এসি স্লিপার টিকেট নিয়ে নিলাম ২৪০০ টাকা দিয়ে (সার্ভিস চার্জ সহ)। এবার অপেক্ষার পালা নির্ধারিত দিনে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করার জন্য।
১ম দিনঃ রাত ১০ টায় আরামবাগ কাউন্টার থেকে নন এসি বাস (৬০০ টাকা) রওনা দিয়ে বেনাপোল পৌঁছায় ভোর ৬ টায়।
২য় দিনঃ বেনাপোল ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে অটো তে করে বনগা রেলস্টেশন (৩০ রুপি), ওখান থেকে ট্রেনে (২০ রুপি) দিয়ে কলকাতা পৌঁছায় দুপুর ২ টায়। ৫০০ রুপি দিয়ে বাজেট রুম নিয়ে আমরা ৩ জন আজ কলকাতায় থাকবো।
৩য় ও ৪র্থ দিনঃ সকাল ১১.৪৫ মিনিটে কলকাতা স্টেশন থেকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস নন এসি স্লিপারে করে যাত্রা শুরু। প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর ৮০ এর অধিক জংশন শেষ করে আমরা জম্মু রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ১১ টায়।
৫ম দিনঃ জম্মুতে হরতালের কারণে সারাদিন গাড়ি বন্ধ ছিল, তাই সারাদিন অপেক্ষা করে সন্ধ্যা ৬.০০ টায় জম্মু থেকে বাসে অনন্তনাগের উদ্দেশ্যে যাত্রা (৬৫০ রুপি)। অনন্তনাগ পৌঁছায় ভোর ৫ টায়।
৬ষ্ঠ দিনঃ অনন্তনাগ থেকে পেহেলগামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয় (১০০ রুপি) জন প্রতি এবং পেহেলগাম পৌঁছায় সকাল ১০ টায়। পেহেলগামে পৌঁছেই বাজেট হোটেলে রুম নিলাম (৬০০ রুপি) ৩ জন। রুমে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরলাম কাশ্মিরের সুধারস উপভোগ করার জন্য। ১৮০০ রুপি দিয়ে রিজার্ভ কার ভাড়া নিলাম সারাদিনের জন্য। প্রথমে গেলাম আরু ভ্যালি, খুবই চমৎকার ও নৈসর্গিক একটি স্থান। আমাদের গত ৪ দিনের যাত্রা সার্থক হতে শুরু হলো। পাইন গাছের সারি, নদীতে বরফগলার স্বচ্ছ পানির প্রবাহ, ভেড়ার পালের বিচরণ এক অন্য আবেশ সৃষ্টি করছে। এখানে প্রায় ১ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করে চলে গেলাম চন্দনওয়ারি। এবার বরফ দেখার পালা, পাহাড়ের পাদদেশ পুরাই বরফে ঢাকা। আমরাও উঠে গেলাম আর বরফ নিয়ে খেলা করতে শুরু করলাম। স্নিগ্ধ-বাতাস মনের কোঠায় এক প্রশান্তি এনে দিল। এখানে ও প্রায় ২ ঘন্টা ঘুরে বেড়ালাম। এবার যাবার পালা বেতাব ভ্যালি। বেতাব ভ্যালি মূলত একটি পার্ক, যেটা নদীর পাড়ে অবস্থিত। আশির দশকের বিখ্যাত হিন্দি “বেতাব” মুভির শুটিংয়ের পরে যার নাম হয়ে যায় বেতাব ভ্যালি। খুবই দৃষ্টিনন্দন ও হেঁটে বেড়ানোর জন্য অসাধারণ একটি জায়গা এই বেতাব ভ্যালি। এখানেও ১ ঘন্টার মত সময় কাটিয়ে চলে গেলাম পেহেলগামের মল চত্তরে। এখানকার মসজিদ, হাসপাতাল ও দোকানপাট এক অমায়িক চাদরে গ্রহণ করেছে আমায়। বিকেলের গোধূলির কিরণ ঐ দূরের পাহাড়ের চূড়ায় বরফের মিনারে স্বর্ণালি বিকিরণ ছড়াচ্ছে। যা দেখতে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। মাগরিবের আযান হলে সন্ধ্যাটা এখানেই আড্ডা দিতে লাগলাম। রাতের খাওয়া সেরে নিলাম কাশ্মিরি উপাদেয় দিয়ে। রাতে হোটেলের রুমে আড্ডা দিতে দিতে ঘুমিয়ে গেলাম।
৭ম দিনঃ সকালে ঘুম থেকে ওঠেই নাস্তা সেরে ঘোড়া ও গাইড ঠিক করলাম (৮০০ রুপি) ৩ জনের জন্য। পাহাড়ের উপর কিছুদূর পায়ে হেঁটে, কিছুদূর ঘোড়ায় হেঁটে দেড় ঘন্টা পর বাইসারান ভ্যালি পৌঁছে যাই। প্রকৃতি যেন সবুজ চাদর মুড়িয়ে আমাদের সম্ভাষণ জানাচ্ছে। জায়গাটা এত বেশি সুন্দর যে, আপনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেন না। চারিদিকে বাইন ও দেবদারু গাছের সারি আর তার পিছনে সুইচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় বরফের আস্তরণ কি যে এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা স্বচক্ষে না দেখলে বুঝানো মুশকিল। জায়গাটি এত বেশি ভালো লেগেছিল যে, প্রায় ৩ ঘন্টা বাইসারান ভ্যালিতে সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। তারপর আবারো একই পথে ঘোড়া নিয়ে পাহাড় পেরিয়ে পেহেলগাম শহরে চলে আসলাম। এবার যাওয়ার পালা রাজধানীতে অর্থাৎ শ্রীনগর। দুপুরে পেহেলগাম থেকে অনন্তনাগ হয়ে শ্রীনগরে চলে আসলাম (জনপ্রতি ২০০ রুপি খরচ হল)। শ্রীনগরের ডাল লেকে হাউস বোটে ৫০০ রুপি (৩ জন) দিয়ে রুম নিলাম। এইদিন সন্ধ্যায় দোতলা খোলা বাসে করে গানের গানের তালে তালে ডাল লেকের সাইট সিন করলাম(১০০ রুপি) জনপ্রতি। সন্ধ্যার পরে হেঁটে হেঁটে শ্রীনগর শহর উপভোগ করতে লাগলাম। রাতে হাউসবোটই রাত্রি যাপন।
৮ম দিনঃ সকাল ৮ টায় নাস্তা সেরে ৫ জন (২০০০ রুপি) গাড়ি রিজার্ভ করে সোনমার্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। পথিমধ্যে বিখ্যাত সিন্ধু নদীর উপত্যকায় চা বিরতির মুহুর্তটি এককথায় অসাধারণ ছিল। সোনমার্গ নেমে জনপ্রতি ৮৫০ রুপি দিয়ে ঘোড়া ভাড়া নিয়ে বরফ দেখতে রওনা হলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা পর সোনামার্গ মূল পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছালাম। অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়েছে বিষ্ময়ে। কি অপরূপভাবে প্রকৃতি তার নিজেকে সাজিয়েছে। চারিদিকে বরফ আর বরফ, সাথে দেবদারু গাছের মিতালী। আর কি লাগে আপনার মনকে আন্দোলিত করার জন্য এখানে স্কেটিং করলাম, বরফ গাড়িতে চড়লাম। দারুণ কিছু মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে রইলাম।প্রায় ২ ঘন্টার মত উপভোগ করে ঘোড়া নিয়ে ফিরে আসলাম। আসার সময় ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা ভিজতে হলো। সোনমার্গ শেষে সন্ধ্যায় শ্রীনগরে চলে আসলাম এবং যার যার মত করে শপিং করলাম। রাতে শীনগরের বিখ্যাত খাবার গুলি খাওয়া হলো। কাশ্মিরের সেই বিখ্যাত ওয়াজুয়ান ও পরখ করে দেখা হলো। অসাধারণ স্বাদ এই বাহারি পদের খাবারটির। আজকে রাতে ও হাউস বোটেই রাত্রি যাপন।
৯ম দিনঃ সকাল ৮ টায় ১৫০০ রুপি (৫ জন) রিজার্ভ গাড়ি করে শ্রীনগরের লোকাল
–
–
–
–
–
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.