পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় কি না?
সত্য নাকি ভুয়া???????
আসুন বুঝি Math আর Physics দিয়ে।
.
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ১৫৭ কিমি। বিশ্বাস না হলে।প্লিজ গুগল করেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পঞ্চগড় ৪৬ মিটার উঁচু। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ৮৫৮৬ মিটার উঁচু। তাহলে পঞ্চগড় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতার পার্থক্য ৮৫৪০ মিটার।
.
ক্লাস ৯-১০ এ সাইন্সের সবাই পড়েছে s=r@. (যেখানে, s=বৃত্তের চাপ, r=বৃত্তের ব্যাসার্ধ, @=রেডিয়ানে কোণের পরিমাণ)
চিত্রমতে, এখানে, s=কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮.৫৮৬ কিমি, r=দূরত্ব ১৫৭ কিমি। তাহলে @ এর মান আসে ৩.১৩ ডিগ্রি যা বুঝায় ৮.৫৮৬ কিমির কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।(ক্যালকুলেটর চাপেন)
.
কিন্তু পৃথিবীপৃষ্ঠ বাঁকা হওয়ায় ১৫৭ কিমি দূরত্বের কারণে স্পর্শক বরাবর আমাদের দৃষ্টি পড়বে ভূমি থেকে সর্বনিম্ন ১.৯৩ কিমি উঁচু থেকে। এর অর্থ কাঞ্চনজঙ্ঘার ভূমি থেকে ১.৯৩ কিমি উচ্চতা দেখা যাবে না পৃথিবীর বক্রতার জন্য।(পীথাগোরাসের ম্যাথ করেন)
.
তাহলে অবশিষ্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮.৫৮৬-১.৯৩=৬.৫৬৫ কিমি। এই ৬.৫৬৫ কিমি অর্থ ২.৪ ডিগ্রি। এটিই কাঞ্চনজঙ্ঘার কৌণিক দূরত্ব।
.
এবার আসি অন্য তুলনায়।
.
পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব বর্তমানে ৪০২২২৬ কিমি। চাঁদের ব্যাস ৩৪৭৪.২ কিমি। (না জানলে প্লিজ গুগল)। তাহলে পূর্ণিমা চাঁদের কৌণিক দূরত্ব কত?
পূর্বের নিয়মেই বের করলে পাবেন ০.৫ ডিগ্রি। যা ১ ডিগ্রিরও অর্ধেক।
.
পূর্ণিমা চাঁদ ০.৫ ডিগ্রি (১ ডিগ্রিরও অর্ধেক) হয়ে আপনি ফোন দিয়ে চাঁদের ছবি তুলেন, চাঁদের মায়ায় হারিয়ে যান।
.
আর কাঞ্চনজঙ্ঘা পঞ্চগড় থেকে ২.৪ ডিগ্রি তৈরী করে। যা চাঁদের থেকে প্রায় ৫ গুণ। আর আপনি বলেন এটা দেখা যায় না, ভুয়া, ছবি ফেইক। ক্যাম্নে কি ভাই?????
.
এখন Math, Physics দিয়ে প্রমাণিত যে কাঞ্চনজঙ্ঘা পঞ্চগড় থেকে দেখা যায়। ওকে?
.
এবার কথা বলব, তাহলে কেন সবসময় দেখা যায় না।
.
এর অন্যতম কারণ মেঘ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরের অংশে তাপমাত্রা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে থাকে -২৫ ডিগ্রি সে. থেকে -৩০ ডিগ্রি সে. (সন্দেহ থাকলে একটু রিসার্চ করেন গুগলে)। আর আপনি বিজ্ঞান একটু জেনে থাকলে জানবেন পাহাড়ের চূড়ার আশেপাশের জলীয়বাষ্প এই ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে দ্রুত মেঘে রূপ নেয়। এতে প্রায় সবসময় এর আশেপাশে মেঘ ভীড় করতেই থাকে।
.
ছবিতে ভাল করে দেখুন, আজ ৩১.১০.২০২০ তারিখ শনিবার সকাল ১০ টায় পঞ্চগড় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝে বিন্দুমাত্র মেঘ নেই। দূরে কিছু মেঘ। নিজে থেকে জানতে চাইলে Windy App বা Satellite Weather Live ঘেঁটে দেখুন বর্তমানের অবস্থা।
.
অক্টোবর-নভেম্বরের এই সময়টায় শীতের শুরু। এক ঋতু থেকে আরেক ঋতুর ট্রানজিশন। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর এই ব্যাপারটাকে সুন্দর করে ব্যালেন্স করে সূর্যালোক। শীত শুরু হয়ে গেলে চারপাশ ঢেকে যাবে কুয়াশায়। বুঝতেই পারছেন তখন ১৫৭ কিমি দূর থেকে আলোকরশ্মি আপনার চোখে আসবেই না স্বাভাবিক।
.
এর অর্থ সবসময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে না। দেখা যাবে অক্টোবর-নভেম্বরের কিছু সময় মাত্র।
.
আর এবার অনেক বেশি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কেন?
.
এর অন্যতম কারণ Air Pollution rate অনেক কম। ৩য় ছবিতে আছে। এছাড়া গুগল করতে পারেন। লকডাউনের কারণে এই রেট কমে এসেছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার সামনে, আশেপাশেআছে Kerseong, Pankhabari, Darjeeling, Yuksom, Geyzing, Namchi, Ganktok, Birtamode, Ilam, Phidim সহ আরও অনেক শহর। যেগুলোর Air Pollution পুরো এলাকার বায়ুমন্ডল ঢেকে রাখে। তখন দেখা গেলেও কম পরিষ্কার দেখা যেত। কিন্তু এবার পুরোপুরি ভিন্ন।
.
তাহলে হিসেব কি দাঁড়ায়? পঞ্চগড় থেকে দেখা যায় তো?
আপনার পরিচিত যারা এখনো এটা বিশ্বাস করে না তাদেরকে পোস্টটা দিয়ে Mathematics করতে বলুন।
.
এই পোস্ট লেখার উদ্দেশ্য অনেক জায়গায় দেখলাম পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা নিয়ে রীতিমতো ট্রল হচ্ছে। অনেকের কাছেই ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে নি এখনো। মনে হচ্ছে ভুয়া তথ্য। তাই প্রমাণ উপস্থিত করলাম। আসুন, এসে দেখে যান কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর হ্যাঁ, আমার বাসা পঞ্চগড়। ছোটবেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে বড় হলাম।
.
#বিঃদ্রঃ সকল দূরত্ব পুংখানুপুংখভাবে নাও মিলতে পারে। যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি সঠিক হিসাব দেয়ার। এরপরেও উপেক্ষা করার মত ভুলভ্রান্তি থাকলে উপেক্ষা করবেন, অন্যথায় জানাবেন। আমি আরও শিখতে চাই। ভুলত্রুটি মাফ করবেন।
.
অসংখ্য ধন্যবাদ, পুরোটা পড়ার জন্য।
collected form (ফাহিম ফয়সাল শুভ)
—
—
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.